আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন আর তাড়াতাড়ি উঠেও পড়েন। আবার অনেকেই আমার মতন ঘুমোতে যায় অনেক দেরিতে তাই উঠেও দেরীতে। তবে আপনি কী জানেন কোনটা সঠিক নিয়ম? আর এই অভ্যেসই কিন্তু বদলে দিতে পারে আপনার গোটা জীবন। তাহলে, দেরী না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত, বাড়ির বড়োরা বলে থাকেন, সকালে ঘুম থেকে উঠলে মানুষের দিন ভালো যায় এবং সারাদিন অনেক কিছু করা যায় যেহেতু অনেক সময় পাওয়া যায়। আবার বইতেও বলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে অনেক কিছু অর্জন করা যায়। আবার কেউ কেউ বলেন যাঁরা বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেন তাঁরা অলস প্রকৃতির হন। কিন্তু আবার বিজ্ঞান বলে, যাঁরা দেরী করে ওঠেন তাঁরা অনেক বেশী ক্রিয়েটিভ হন। কিন্তু এই দুই ধরণের তথ্যের মধ্যে কোনটি ঠিক কোনটিই বা আমাদের মেনে চলা উচিৎ? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই দুটির পার্থক্য।
বাড়ির বড়োরা বলে থাকেন যদি আমরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি তাহলে সকাল সকাল নতুন একটি সুন্দর দিনকে স্বাগত জানানো যায় এবং আমরা সকালে উঠলে খুব তাজা ও বিশুদ্ধ অনুভব করি। এছাড়াও ভোর ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে সময়কে ব্রহ্ম মুহূর্ত বলা হয়। এবং বলা হয় মানুষ নিজের মনে মনে যা কল্পনা করে তাই সত্যি হয়। এই জন্য অনেক জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিরা অতো ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেতেন। আবার কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সারারাত না ঘুমিয়ে জেগে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকেন। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক সেই সব মানুষদের নিয়ে যাঁরা রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন এবং সকালে খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়েন।
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা একটি সত্যিই খুব ভালো অভ্যাস। এতে মানুষ অনেক সুস্থ ও সবল হয়ে ওঠেন এবং সারাদিন খুব তাজা অনুভব করেন। গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরণের মানুষ খুব আশাবাদী ও সচেতন হন। কারণ, তাঁরা সারাদিন সূর্যের আলোয় খুব সক্রিয় থাকেন এবং এর ফলে তাঁরা অনেক কাজ সহজেই করে উঠতে পারেন। যেহেতু তাঁদের দিন খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায় তাঁরা পুরো মনোযোগের সাথে নতুন দিন শুরু করতে পারেন। কারণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী যাঁরা ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠে তাঁরা অনেক সুস্থ থাকেন কারণ তাঁরা প্রকৃতির তাজা হাওয়ায় অনেকটা সময় কাটান। এছাড়াও এমআরআই স্ক্যান থেকে জানা যায় এই সময় মস্তিষ্কের Prefrontal cortex অনেক বেশী সক্রিয় থাকে, এর ফলে মানুষের ইচ্ছে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এবং এই ইচ্ছে শক্তিই মানুষকে বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখাতে এবং তা বাস্তবে পরিপূর্ণ করতে উৎসাহিত করে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা কখনোই খারাপ নয়, যাঁরা নিজেদের স্বপ্ন পূর্ণ করতে চান বা নিজের জীবনের উদ্দেশ্য সফলভাবে অর্জন করতে চান সেই সব মানুষের কাছে খুবই প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী।
কিন্তু যাঁরা দেরী করে ঘুমোয় তাঁদের কী হবে? বিজ্ঞান বলে যাঁরা দেরী করে ওঠেন তাঁরা অনেক সৃষ্টিশীল হন। কিন্তু দেরী করে ওঠা এবং ভোরবেলা ওঠা নিশ্চই দুটো কাজই আমরা একসাথে করতে পারবো না। কারণ যিনি দেরীতে শুয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েন, তাঁর শারীরিক ক্ষতি হয়। যাঁরা দেরী করে ঘুমোন তাঁরা সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না। কারণ, যিনি বেশী রাতে শুয়ে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠেন তখন তাঁর দিন শুরু হয় অনেকটা দেরীতে এবং ততক্ষনে বাকিরা নিজেদের কাজ শুরু করে দেন। অনেকে এই সময় নিজেদের ব্রেকফাস্ট বানিয়ে খাওয়াও শুরু করে দেন, কিংবা বাচ্চারা স্কুলের পথে বেরিয়ে পড়ে। এবং যাঁরা অফিসে যায় তাঁরাও তাঁদের অফিসের কাজ শুরু করে দেয়। এর ফলে তাঁরা সমাজের পথে পিছিয়ে পড়েন এবং সকলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না এবং সে পিছিয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এইরকম ভিডিও পেতে অবশ্যই ভিডিওটিকে লাইক করুন।
আবার কিছু মানুষ ভাবেন যে রাতে দেরী করে শুয়ে সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়বেন। কিন্তু এই ধরণের অভ্যেস চূড়ান্ত ক্ষতিকারক। কারণ, কম ঘুমের জন্য তাঁদের মস্তিস্ক অন্যভাবে কাজ করতে শুরু করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় ব্রেনের ফাংশানে সমস্যা হয়। কারণ আমরা সারাদিন যা যা কাজ করি আমাদের ব্রেন তা আলাদা আলাদা ভাবে সেট করে রাখে। এবং পরে যখন আমরা সেগুলো মনে করার চেষ্টা করি তখন সেগুলো ধীরে ধীরে আমাদের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে কারণ সেগুলো থরে থরে আমাদের স্মৃতিতে সাজানো থাকে। কিন্তু রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে সমস্ত স্মৃতিগুলি এক জায়গায় স্টোর হয়। এবং তারপর যখন সেগুলো আমরা মনে করার চেষ্টা করবো সেগুলো মনে করতে আমাদের খুব কষ্ট হবে। এছাড়াও যাঁরা কম ঘুমোই তাঁদের শরীরে dopamine বা আমাদের খুশি রাখার যে হরমোন তা কম তৈরী হয়। এর ফলে মানুষ অবসন্ন ও চিন্তিত হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরে। এর জন্য আমাদের প্রতিদিন অন্তত ৬- ৭ ঘন্টা ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। তবে এই মানুষগুলো খুবই ক্রিয়েটিভ হয়, কারণ তাঁরা ভিড়ের মধ্যে না মিশে কোনো জিনিসকে নিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এবং তাঁরা নিজেদের জীবন নিজের ইচ্ছে মতো চালিত করতে পারে। এছাড়াও এর একটি ভালো দিক হলো যাঁরা দেরী করে ঘুমোয় তাঁরা আগে থেকে কোনো খারাপ জিনিস আঁচ করতে পারেন এবং প্রস্তুত থাকতে পারেন। এই জন্য তাঁরা সাধারণ মানুষের থেকে একটু বেশীই ভাবতে পারেন। তাই খেয়াল করলে দেখা যায় যে সমস্ত আর্টিস্ট বা শিল্পীরা দেরী করে ঘুমোয়। যাতে তাঁরা নতুন নতুন চিন্তা করতে পারেন এবং সেগুলো নিয়ে তাঁরা কাজ করতে পারেন। কারণ তাঁদের মাথায় এই চিন্তা থাকে না যে সকালে উঠে তাঁদের প্রতিদিনের রুটিন মেনে চলতে হবে। এই জন্য তাঁরা দেরী করে ঘুমিয়ে নিজেদের স্বপ্ন নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পথে এগোয়। তবে দেরীতে যাঁরা ঘুমোয় তাঁদের শরীর কিছুটা হলেও অসুস্থ হয়। কারণ তাঁরা শরীরের ঠিক মতন যত্ন নিতে পারেন না, যেমনটা নেওয়া দরকার।
শেষে একটাই কথা বলা দরকার এই যে, এটা আমাদের ওপর যে আমরা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে তাড়াতাড়ি উঠবো না দেরী করে ঘুমিয়ে তাড়াতাড়ি উঠবো? কিন্তু আমাদের সকলের জেনে রাখা দরকার যে ঘুম আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ ঘুম ভালো হলে শরীরও ভালো থাকবে। এবং ঘুম ভালো হলে আমরা সারাদিন তাজা অনুভব করি এবং হাসি খুশি থাকি। তাই আর যাই হয়ে যাক অন্তত সারাদিনে ৬ ঘন্টা ঘুমের খুব প্রয়োজন।
Share to help